প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মৃত বাঙালি সৈনিকের ইতিহাস

প্রকাশঃ এপ্রিল ১২, ২০১৫ সময়ঃ ৮:২৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:২৬ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

bbcbengaliপ্রায় একশো বছর আগের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মৃত এক বাঙালি সৈনিকের ব্যবহৃত সরঞ্জাম কলকাতায় খুঁজে পাওয়া গেছে। পূর্বতন ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগরের বাসিন্দা যোগেন সেন বিশ্বযুদ্ধে ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টে যোগ দিয়েছিলেন।

লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক শান্তনু দাস এসেছিলেন চন্দনগর মিউজিয়ামে। তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই খুঁজে পান চন্দননগরের আদি বাসিন্দা যোগেন সেনের ইতিহাস। তারপরে খোঁজ পাওয়া যায় যে চন্দননগর মিউজিয়ামে রয়েছে যোগেন সেনের ব্যবহার করা বিভিন্ন সামগ্রী। খবর বিবিসি বাংলার।

কিউরেটর অরূপ গাঙ্গুলি বলেন, ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টের সৈনিক যোগেন সেনের ব্যবহৃত জিনিসের মধ্যে রয়েছে ভাঙ্গা চশমা, পয়সার থলি, নোটবই, কয়েকটা ফিকে হয়ে যাওয়া ছবি, ব্যাজ, ছুরি প্রভৃতি। মিউজিয়ামের গুদাম থেকে উদ্ধার হওয়া যোগেন সেনের ব্যবহৃত সামগ্রী যোগেন সেনের ব্যবহৃত চশমা
এই সামগ্রীগুলো একটা সময়ে মিউজিয়ামের গুদামঘরে পড়েছিল। সম্প্রতি সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

অধ্যাপক দাশ বলেন, যোগেন সেনের ব্যবহৃত জিনিষগুলির মধ্যে একটা ছোট্ট বই রয়েছে, যেটা বেশ রহস্যজনক। কোনও এক নারী এই বইটা উপহার দিয়েছিলেন যোগেন সেনকে। কিন্তু তিনি কে, সেটা অজানা। ফরাসি উপনিবেশ চন্দনগর, যেখান থেকে ইয়র্কশায়ার, ৫ হাজার মাইলেরও বেশি পথ – এই দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে যোগেন সেন কেন যুদ্ধে যোগ দিতে গেলেন।

শান্তনু দাস বলেন, “মি: সেন লিডসে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গিয়েছিলেন। তার আগে তার দাদাও ইংল্যান্ড থেকে ডাক্তারি পাশ করে দেশে এসে রেলে চাকরি করতেন। তাই এই পরিবারটার সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের একটা যোগাযোগ ছিলই। যোগেন সেন পড়া শেষ করেন ১৯১৩ সালে, আর পরের বছর যুদ্ধ শুরু হয়।“
“দেশে থাকলে তিনি যুদ্ধে যোগ দিতে পারতেন না – কারণ বাঙালিদের সেই সময়ে সৈনিকের কাজে নেওয়া হত না খুব একটা। মি. সেন তাঁর রেজিমেন্টের সবথেকে শিক্ষিত সৈনিক ছিলেন, তবে ভারতীয় হওয়ায় তিনি অফিসার হতে পারেন নি – প্রাইভেট হিসাবেই মারা যান।“

SOLDERচন্দননগর মিউজিয়ামের ডিরেক্টর রিলা মুখার্জী বলেন, যোগেন সেনের পরিবারের ইতিহাস এখনও অজানা। আমরা কয়েকটা জিনিস পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু এই পরিবার সম্বন্ধে কিছুই জানি না। বাড়ির দুই ছেলে বিলেতে পড়তে গেল – এঁদের অর্থের উৎস কী ছিল – এঁরা কি জমিদার বা অর্থবান ব্যবসায়ী ছিলেন – কেনই বা ফরাসি উপনিবেশে থেকেও ইংল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ – কিছুই জানা যায় না।“

রিলা মুখার্জী বলেন, “যোগেন সেনের বিধবা মায়ের কথাই আমরা শুধু জানি। তাঁর যুদ্ধের সময়কার বা লিডসের জীবন তো নিশ্চয়ই গবেষণার বিষয়, কিন্তু একই সঙ্গে ভারতে তাঁর পরিবার বা জীবন নিয়েও গবেষণা হওয়া উচিত।“
রিলা মুখার্জী বা শান্তনু দাস – দুজনেই বলেছেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অনেক ইতিহাস, অনেক তথ্যই ভারতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বহু বাঙালীও সৈনিক হিসাবে অথবা অন্যান্য কাজে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে কোনও এক অদ্ভূত কারণে ভারতীয়রা সেইসব তথ্য সামনে তুলে নিয়ে আসতে অস্বস্তি বোধ করেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G